আমার মন - বিবাগী ঘোড়া বাগ ফিরাতে পারি নে দিবারাতে

আমার মন বিবাগী ঘোড়া বাগ ফিরাতে পারি নে দিবারাতে ।
মুর্শিদ আমার বুটের দানা খায় না ঘোড়ায় কোন মতে ।।

বিসমিল্লায় দিয়ে লাগাম
একশ' ত্রিশ তাহার পালান
হাদিস মতে কশনি কসে
চড়লাম ঘোড়ায় সোয়ার হতে ।।

বিসমিল্লার গম্ভু ভারি
নামাজ রোজা তাহার সিঁড়ি
খায় রাতে দিনে পাঁচ আড়ি
ছিঁড়ল দড়া আচম্বিতে।।

লালন সাঁই কয় রয়ে সয়ে
কত ঘোড়সোয়ারি যাচ্ছে বেয়ে
পার যাব কি আছি বসে
শুধু আমার কোড়া হাতে ।।

আমার দেখেশুনে জ্ঞান হলো না

আমার দেখেশুনে জ্ঞান হলো না ।
কী করিতে কী করিলাম দুগ্ধেতে মিশালাম চোনা ।।

মদন রাজাকার ডঙ্কা ভারি
ছিলাম রে তার আজ্ঞাকারী
যার মাটিতে বসত করি
চিরদিন তারে চিনলাম না ।।

রাগের আশ্রয় নিলে রে মন
কী করিতে পারে শমন
আমার হল কামলোভী মন
হলাম মদনরাজার গাঁঠরি টানা ।।

উপর হাকিম একই দিনে
বিচার করবে নিজ গুণে
দিনের অধীন লালন ভনে
গেল না মনের দোটানা ।।

আমার দিন কি যাবে এই হালে আমি পড়ে আছি অকূলে

আমার দিন কি যাবে এই হালে আমি পড়ে আছি অকূলে ।
কত অধম পাপী তাপী অবহেলে তরালে ।।

জগাই-মাধাই দুটি ভাই
কাঁধা ফেলে মারিল গায়
তারেও তো নিলে ।
আমি পাপী ডাকছি সদাই
দয়া হবে কোন কালে ।।

অহল্যা পাষাণী ছিল
সেও মানব হলো
প্রভুর চরণ ধুলে ।
আমি তোমার কেউ নই দয়াল
তাই কি মনে ভাবিলে ।।

তোমার নাম লয়ে যদি মরি
দেখব তবু তোমারি
আর যাব কোন কুলে ।
তুমি বই আর কেউ নাই আমার
মূঢ় লালন কেঁদে বলে ।।

আমায় চরণ-ছাড়া কর না হে দয়াল হরি

আমায় চরণ-ছাড়া কর না হে দয়াল হরি ।
আমি অধম পামর বটে দোহাই দেই তোমারি ।।

চরণের যোগ্য মন নয়
তবু মন ওই রাঙা চরণ চায়
দয়ালচাঁদের দয়া হইলে
পারে যায় অপারি ।।

অনিত্য সুখের সর্ব ঠাঁই
তাই দিয়ে জীব ভুলাও হে গোঁসাই
চরণ দিতে কেন তবে
কর হে চাতুরী ।।

ক্ষম অধীন দাসের অপরাধ
শীতল চরণ দেও হে দীননাথ
লালন বলে ঘুরাইও না হে
করে মায়াকারি ।।

আমার চরকা ভাঙ্গা টেকো আড়ানে

আমার চরকা ভাঙ্গা টেকো আড়ানে ।
আমি টিপে সোজা করব কত আর তো প্রাণে বাঁচিনে ।।

একটি আঁটি আরেকটি খসে
বেতো চরকা লয়ে যাব কোন দেশে
আর কতকাল জ্বলবো এ হালে
এ বেতো চরকার গুণে ।।

ছুতোর ব্যাটার গুণ পরিপাটি
ষোল কলে ঘুরায় টেকোনি
তার একটি কলে বিকল হলে
সারতে পারে কোনজনে ।।

সামান্য কাঠ পাটের চরকা নয়
তার খস্‌লে খুঁট খেটে আঁটা যায়
মানবদেহ চরকা সে তো
লালন কি তার ভেদ জানে ।।